নিজস্ব সংবাদদাতা:-
জুলাই আন্দোলনের গত ১ বছরে প্রায়ই নানা তদন্তে বের হয়ে আসছে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর। তেমনি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বিভাগ-২, রাজশাহী। বিগত সরকারের সময় গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। এই বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়ে এই বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহার, এবং নিয়োগ বাণিজ্য ও বদলিতে অনিয়ম। নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আযম এর নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি মো. আরিফ হোসেন। যিনি উপ- সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে রাজশাহীর মেডিকেলের সকল কাজের দায়িত্বশীল। রয়েছেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের আরেক নেতা মো. কাওসার সরকার। যিনি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে মেডিকেল সহ সকল কাজের দায়িত্বশীল। এই ত্রি-রত্নের কারসাজিতে ঠিকাদার মো. তরিকুল ইসলাম শুভ’র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সোবহান এন্ড ব্রাদ্রার্স ও মেসার্স উত্তরা বিল্ডার্স’ যার ব্যবসায়িক পার্টনার মো. কাওসার সরকার নিজে, এই ২টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও কাওসার সরকারের বোনজামাই মো. আতিক সহ এই পাঁচ জনের টিম অনেক কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারার মাধ্যমে বিপুল পরিমান সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আযমের নিজ জেলা টাঙ্গাইল গণপূর্ত বিভাগের অধীন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণ কাজে জরিত থাকাকালীন ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া টাঙ্গাইল থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত চারলেন বিশিষ্ট রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ কাজের বিদ্যমান স্থাপনা সমূহের মূল্য নির্ধারণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল পরিমান সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি। পারিবারিকভাবে বিগত স্বৈরাচারী সরকারের অনুগত ও আস্থাভাজন নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আযম কিছুদিন আগে এমনই এক দুর্নীতি করতে গিয়ে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী জান্নাত -ই- নূর কে অন্যায়ভাবে শোকজ করেন। যা নিয়ে তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত প্রকৌশলীকে শোকজ এর আসল রহস্য উন্মোচন :
গত ২ জুলাই, ২০২৫ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাপক অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সমন্বিত ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ ইউনিট নির্মানের অধীন স্যানিটেশন ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন কাজের জন্য আনা মালামাল সমূহের ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে ব্র্যান্ড প্রস্তাবনা সরবরাহ না করেই গণপূর্ত বিভাগ-২ রাজশাহীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ইএম) জান্নাত-ই-নুর কে উক্ত মালামালের বিল দিতে চাপ প্রয়োগ করা হয় মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
তিনি দুইবার শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত ও একজন সৎ অফিসার হিসেবে অত্র অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পরিচিত। সার্বিক দিক বিবেচনায় ও রাজশাহী ক্যান্সার হাসপাতালের গুণগত মান সম্পন্ন সঠিক পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ইএম),রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর মতামত প্রদানের জন্য নোটশিট ইনিশিয়েট করেন, যা রাজশাহী গণপূর্ত জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে ঢাকায় ইএম পি এন্ড ডি জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে প্রেরণ করলে নোটশিটের প্রতুত্তরে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জানান যে, সরবরাহ করা আইটেমগুলো ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল সংশ্লিষ্ট নয়। তবুও তখন তাকে বিল না দেয়ার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম,রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২, তার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. কাওসার সরকার এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মিলে সকল সিভিল কাজের একটি সিন্ডিকেট তৈরী করতে পারলেও ইএম উপ বিভাগের এই সৎ কর্মকর্তার কারণে পুর্নাঙ্গভাবে সিন্ডিকেটের কর্তৃত্ব স্থাপনে সমস্যা হওয়ায় এই ঘটনার নাটক মঞ্চস্থ করেন। উল্লেখিত প্রকৌশলীদের সবার বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ব্যাপক দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বিগত সৈরাচারী সরকার ও দলের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আযম , উপ সহকারি প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আরিফ হোসেন (ছাত্রলীগ সভাপতি) এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাওসার সরকার সম্মিলিতভাবে টাইলস, রং, কাঠের/পিভিসি/ডাব্লুপিসি দরজা সহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুতকারী কোম্পানীর প্রতিনিধির সাথে যোগসাজস করে কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে তাদের নির্দেশিত প্রতিষ্ঠান/কোম্পানীর থেকে মালামাল নিতে বাধ্য করে আসছেন। এভাবেই নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারদের তারা কাজ পাইয়ে দেন।
এদিকে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে লোক নিয়োগের নিয়ম থাকলেও তা কোনোভাবেই মানছেন না এই বিভাগের কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, মিস্ত্রী, প্ল্যাম্বার, এমএলএসএস, সুইপার সহ প্রায় ১০ জনের একটি টিমকে অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। তবে তাদেরকে যত্রযত্র বুঝিয়ে বড় বড় অংকের বিল বের করে তা নিজে আত্মসাৎ করেন রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। এই তালিকায় মানিক নামে নির্বাহী প্রকৌশলীর এক ভবঘুরে শ্যালকও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
গণবদল ও সুকৌশলে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন :
অভিযোগে আরও জানা গেছে, সম্প্রতি গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের ব্যাপক গণবদলি চলছে। এই সুযোগে একটি চক্র ঢাকার মতো এলাকায় জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা/সংস্কার ও নির্মাণ কাজে যুক্ত হয়েছেন, যা দেশের জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। যেমন গণপূর্ত উপ-বিভাগ-১, রাজশাহীর উপ-সহকারী প্রকৌশলী শ্রী কিশোর কুমার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সত্যজিৎ