নিজস্ব প্রতিনিধি:-
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সবসময় বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, খুনী, বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ উদ্ধার, ডাকাত, ছিনতাইকারী, অপহরণ, প্রতারক ও হত্যাকান্ডের অপরাধে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগণের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। গত ১৭ জুন ২০২৫ ইং তারিখ রোজ মঙ্গলবার সকালে সোনারগাঁও উপজেলার ভারগাঁও এলাকার ওলামা নগর খালপাড় বেরিবাঁধের পূর্ব পাশ থেকে রতন (৩৮) নামে এক যুবকের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত রতন নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঁচপুর এলাকার মোঃ মালেক মোল্লার ছেলে। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সোনারগাঁয়ের নাওড়া বিটা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, সকালে খালপাড় এলাকায় রক্তাক্ত অবস্থায় একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে সোনারগাঁও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠান। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে এবং এলাকাবাসী আসামীদেরকে দ্রæত গ্রেফতারের লক্ষ্যে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে।
৩। এরই প্রেক্ষিতে ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার সংবাদটি প্রাপ্ত হয়ে র্যাব-১১, নারায়ণগঞ্জ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উৎঘাটনের জন্য ছায়া তদন্ত আরম্ভ করে। পরবর্তীতে নিজস্ব গোয়েন্দা নজরদারি ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১, সদর কোম্পানী, আদমজীনগর, নারায়ণগঞ্জ এবং র্যাব-১৩, সিপিএসসি, রংপুর এর যৌথ আভিযানিক দল ০২/০৭/২০২৫ ইং তারিখ সন্ধ্যা ১৯:০০ ঘটিকার সময় কুড়িগ্রাম জেলার সদর থানাধীন পাচগাছি হারুগারা ইউপির অন্তর্গত আরাজী কদমতলা এলাকা হতে উক্ত হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার বরাব মুগড়াকুল এলাকার মৃত নবুর ছেলে ইয়ানুছ (৪০)।
৪। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামী ও ভিকটিম পূর্বপরিচিত। তারা দুজনই একই এলাকার বাসিন্দা ও মাদক ব্যবসায়ী হওয়ায় মাঝে মাঝে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের বিরোধ হতো। এরই প্রেক্ষিতে ০২ বছর আগে ভিকটিম ও আসামীর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে এবং ভিকটিম আহত হয়। হত্যা কান্ডের ১৫ দিন আগে আবার ভিকটিম ও আসামীর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে আসামী ইয়ানুছ (৪০) ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এজাহারনামীয় ৩নং আসামী হাসেম (৪০) ও ৪ নং আসামী ইলিয়াছ (৩০) এর সহযোগিতায় ঘটনার তারিখ ১৭/০৬/২০২৫ ইং ভোর ০৩:৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিমকে ডেকে নিয়ে মারধর করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করা হয়। এরপর আসামীরা ভিকটিমের গলা ও হাত-পায়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে। উক্ত হত্যাকান্ডে মোট ০৮ জন অংশ নেয়। তারা ভিকটিমের লাশ খালে ফেলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। ঘটনার পর থেকেই প্রধান আসামী ইয়ানুছ পলাতক ছিল, গ্রেফতারের পূর্বে সে কুড়িগ্রামে আত্বগোপন করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে আরো স্বীকার করে যে গ্রেফতার এড়াতে সে পাশর্^বর্তী দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। যার ফলে সে কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল। উল্লেখ্য যে, র্যাব-১১ এর অভিযানে এই হত্যাকান্ডে জড়িত এজাহারনামীয় ৫, ৬ এবং ১১ নং আসামীদেরকে ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার পূর্বক হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ০১টি ছুরি ও হত্যার প্রমাণ লোপাট এর কাজে ব্যবহৃত ০২টি বালতি (সাদা ও কালো রংয়ের) উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ৫নং আসামী ওসমান (৩২) বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
৫। গ্রেফতারকৃত আসামী ইয়ানুছ (৪০) এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায় ০১টি হত্যা চেষ্টার মামলাও রয়েছে। আসামীকে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার মোট ০৪ (চার) জন আসামী।